"নিষেধাজ্ঞার পরও অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনা,আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন?



সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক অনন্য সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এমন এক সময়ে, যখন দেশের বৃহত্তম ও সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সময় পার করছেন—এমন বিশ্লেষণ এখন অনেকের মুখে মুখে। ৭৮ বছর বয়সে এসেও তিনি যে প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন, তা কেবল বর্তমান প্রেক্ষাপটেই নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেও বিরল।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিকভাবে অগণতান্ত্রিক নয়, বরং তা দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনাকে অস্বীকার করার নামান্তর। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—আওয়ামী লীগকে ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সেই দলই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক স্পিরিট এখনো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেঁচে আছে।

আজ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েনি। বরং ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে এই দলটির প্রতি জনসমর্থন দ্রুতগতিতে বাড়ছে। যাঁরা একসময় সমালোচক ছিলেন, তাঁরাও আজ এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন—এটি কোনো একক দলের বিরুদ্ধে নয়, এটি দেশের রাজনীতিকে একচেটিয়া করার চক্রান্ত।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি একদিকে নিজেদের সম্ভাব্য ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে, অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কখনো টেকসই সরকার গঠন সম্ভব নয়। ২০০৬-এর ‘লগি-বইঠা’ আন্দোলন কিংবা ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচন—দুটিই বিএনপির জন্য ছিল বড় শিক্ষা। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়ার মূল্য এবারও চুকাতে হতে পারে।

আন্তর্জাতিক পরিসরেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। ভারত ইতোমধ্যে বুঝে গেছে—বাংলাদেশে তাদের প্রকৃত মিত্র কে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্বার্থ সবচেয়ে বেশি সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে দখলদার গোষ্ঠী বা পশ্চিমা হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও ভারতের সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে—এমনটা স্পষ্ট।

আজ শেখ হাসিনার সামনে হারানোর কিছু নেই। তিনি এখন মুক্ত, নির্ভীক এবং সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে লড়ছেন। তাঁর এই রাজনীতি কেবল নিজের দল বাঁচানোর জন্য নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন কেবল সময়ের ব্যাপার।

 ঐতিহাসিক সত্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় অনেকেই—আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়; এটি একটি চেতনার নাম, একটি ঐতিহ্যের নাম, একটি জাতির মুক্তির নাম। কোনো নিষেধাজ্ঞা, কোনো চক্রান্ত, কোনো দখলদার এই চেতনাকে থামাতে পারেনি, পারবেও না।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url