নয় মাসে আড়াই হাজার হত্যাকাণ্ড: নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন।


স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, ৯ জুন ২০২৫
চলতি সরকারের আমলে গত নয় মাসে সারাদেশে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের ক্রাইম ডেটাবেইস, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, এই সময়ে সারাদেশে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৯ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানায় এসব ঘটনার বিপরীতে দায়ের হয়েছে প্রায় সমসংখ্যক হত্যা মামলা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিসংখ্যান শুধুই ঠাণ্ডা সংখ্যা নয়, বরং এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রের নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

পরিসংখ্যান যা বলছে

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), এবং পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী:

সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে দেশে ২,৪৬০টি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৭২% ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক কলহ ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে দায়ী করা হয়েছে।

১৮% ঘটনা সংগঠিত হয়েছে চুরি, ডাকাতি বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে।

১০% ঘটনা এখনো ‘অজানা অপরাধী’ বা ‘অজ্ঞাত কারণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত।

অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই বিচারহীনতার গহ্বরে

বিশিষ্ট অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, “বাংলাদেশে হত্যা মামলার মাত্র ২০% আদালত পর্যন্ত পৌঁছে এবং তারও কম সংখ্যক মামলার রায় হয়। এতে অপরাধীদের মধ্যে বিচার থেকে পার পাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদন্ত প্রক্রিয়া, এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে অধিকাংশ মামলাই ধামাচাপা পড়ে যায়।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা

সরকার দাবি করে আসছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তথাপি, বাস্তব চিত্র বলছে অন্য কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিমা রহমান বলেন, “নিয়মিত অপরাধের ঘটনায় স্বাভাবিক মৃত্যুর চিত্রও অনেক সময় ঝাপসা হয়ে যায়। এটা ভয়াবহ।”

তিনি আরও বলেন, “সুশাসনের অনুপস্থিতি, পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্বের ঘাটতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদন্তের অভাবে সাধারণ নাগরিকদের জীবন নিরাপদ নয়।”

বিভাগভিত্তিক পর্যালোচনা

নিরাপত্তা বিশ্লেষণ সংস্থা CID Watch-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত নয় মাসে হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ হার ছিলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা বিভাগে। এর মধ্যে:ঢাকা বিভাগে ৭৪৫টি হত্যা মামলা চট্টগ্রামে ৫৮৩টি কুমিল্লা ও আশেপাশে ৩২৮টি
খুলনায় ২২৫টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে।
কীভাবে কমানো যেতে পারে হত্যাকাণ্ডের হার?

বিশেষজ্ঞরা কিছু বাস্তবমুখী পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন:

1. সরাসরি তদন্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ
2. থানা পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জোরদারকরণ
3. সাক্ষী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন
4. ক্রাইম ডেটা ওপেন করে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
5. স্থানীয় স্তরে সামাজিক সালিশের বদলে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url